মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

প্লাস্টিক


ঝুমঝুমে আকাশের আদরে,
প্লাস্টিক পৃথিবী ছুঁয়ে ,জল অবিরল,
ধুয়ে দিচ্ছে সমস্ত মানবিক আত্মহনন।
পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া মানুষের ছাই
উড়ে পার হচ্ছে ইতিহাসের পাতা।

আমি এই বদ্ধ ঘরে মহাভারত পড়ি,
শাপ আর অভিশাপে জীবন নির্মল।
ঘোলা বায়ুমণ্ডল জানাচ্ছে মৃত্যু,
বিষাদ ও বিষণ্ণতার রঙ এখনো ধূসর।

নদী খুড়ে মানুষ বের করছে অবাক আলো
ভেজা বালুর মতো জীবন আপাতত ভালো।





সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০১৭

নষ্ট

কিছু নিষিদ্ধ যুবক,
ধোঁয়াটে আধারের শব্দবাজ আজ।
আঙুল বাজনা বাজায় না যদিও
গলাও সুর তোলে না কখনো,
কেবল সিলিং টের পায়,
অনবরত কিছু দুঃখ উড়ে যায়।

কাগুজে অক্ষর অন্ধ শালিক হয়ে
চাঁদের ভেতরে কবিতা পড়ে একা
সমস্ত মৃত কবিদের এক সম্মেলন
কেউ আসে না পাখিদের খোঁজে।


কারো সাথে কেও নেই,
কারো পাশে কেও নেই,
সবাই যার যার মতো বদ্ধ ঘরে,
আলপনা আঁকে নষ্ট রঙে!
শব্দ সাজায় নতুন ঢংয়ে!
সুর তোলে, লয় তাল সম,
করুণ গান্ধার কেঁদে মরে।

শেষমেষ মানুষটা ফাঁকা রাস্তায়,
একা রিকশায় জলন্ত আগুন,
কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো ফোটে।
ভেজা শিউলির মতো কিশোরীরা
বিক্রি হয় ল্যাম্পপোস্টের নীচে।

তাদের দাম ফুলের চেয়েও কিছু কম
সুখ নামের প্রেমিকেরা পালিয়েছে
কালো আকাশে জোছনা মরেছে কখন!
বুকের খাজে এখন,ভাত আর দাঁতের জখম।  

শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭

চায়ের চিঠি

ভালো আছো?
খুন হওয়া সন্ধ্যায় কড়া স্বপ্নের চা,
বিষণ্ণ করোটি ঝিম ধরিয়ে রাখে এখনো?
মনে হয় নিজস্ব বাস্তবতায়, ঘুমন্ত বিকেলে
আজও আত্মাহীন মানুষের ভীড়ে একা?

অথচ আমরা বেঁচে ছিলাম,
ফুটন্ত পানির টগবগে গোলাপে
তুমি হয়ে উঠেছিলে কড়া লিকার।
শারীরিক চিনির রসায়নে,
প্রেমের তীব্র আলোড়নে,
ভাগ্যের চামচ আমাদের নাড়ালে,
ফুরোতো সমস্ত নিষিদ্ধ আশা।

আজ বরং থাক সেসব কথা!
বাস্তবের কেটলিতে ডুবে মরুক
জীবনের কাল্পনিক ভালোবাসা।



সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

যুদ্ধ

মানুষ আর প্রেম কেও আমার হয় নাই।
আমি ভালোবেসেছিলাম ওদের দুজনকেই
ওরা এভাবে নির্লজ্জ প্রত্যাখান করলো,
আর ছুড়ে ফেলে দিলো আল্পসের করোটিতে

আমি গড়াচ্ছিলাম, নেমে আসছিলাম
মাটির খুব কাছাকাছি সোদা গন্ধে
আমার ঘুম নেমে আসছিলো চোখে
আমি ওদের উপেক্ষা করলাম আরামী বিষাদে।

বরফের কুচিকণারা আমার চোখ ঢেকে দিচ্ছিলো,
অনেক আগের কিসব যুদ্ধে মৃত জমাট সৈনিক
আমাকে বলে দিচ্ছিলো বারবার, কেও বেঁচে নেই।

অথচ একদিন বার্চ আর পাইনের জংগলে ওরাই
আগুন গরম কফির মগ চেপে ধরেছে বুকে
মানুষ যে উষ্ণতা ভুলে গেছে তার সন্তনা পেতে।
এখন মরচের মতো জমে আছে বেয়নেটের ফলায়
তুষারের চাদর গায়ে দিয়ে মাটির গভীর জঠরে।

আমরা ভুলে গেছি অরণ্যের ডাক
ভুলে গেছি পাহাড় আজও গায় আত্মার ভিতরে।
ঝর্ণা অবাক হয়ে জাগে আবছায়ায়, অন্ধকারে।
ভুলে গেছি আমাদের অন্তরে অচীন মানুষ ডাকে।

ফিরে আয়,ফিরে আয়
রক্তের গহীন থেকে ডাকে ভবঘুরে জীবন।
অরণ্য অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়
প্রেমিকেরা সব ধর্ষণ করে ফেলে গেছে তাকে।

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

পুঁথিগন্ধা রোদ

রোরুদ্যমান দুপুরে
এক একটা দিন ঝড়ের অপেক্ষা করি
ধানের পোকারা সোঁদা গন্ধ নিয়ে
চক্রাকারে ঘোরে

কোমল হলুদ ধানের গুচ্ছে
ছেলেবেলার সুর ছড়িয়ে আছে
পুঁথির গানের মতো রক্তে মেশে
ভাতঘুমে আমার চোখ ঝিমিয়ে আসে!

কাঁচা আম কুচি কুচি করে
নুন মরিচের লোনা লাল মিশিয়ে
অনেকটা ভালোবাসা মেখে রেখো
জানলা দিয়ে আসা রোদের মতো
হুট করে আমি ফিরবো একদিন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

কুয়াশার কিশোরী

কুয়াশা নামা পৌষের রাতে আমার কষ্টগুলো,
কি করে যেন, একরাশ ভেজা শিউলি হয়ে ওঠে।
আর একান্ত আধারে, নির্বেদ ঘুমের অনুতাপে,
 ঝরে যায়, আমাদের ভুল ভালোবাসার মতো।

যে কিশোরী তার কোমল তালুতে তুলেছিলো,
সেসব বিচ্ছিন্ন ফুলেল দু:খ, তাকে কেবল মনে পড়ে।
মিহি মেঘের সাদা চাদর গায়ে সে কাঁপছিলো শীতে
পাজরে তার শুভ্র হিম নামছিলো ফেননিভ আদরে।

মায়াবীর সে দেশে ছাই রং ভোরে রাত ঘুম স্বপ্ন হয়।
কিশোরী ফুল কুড়োয়,আকাশ সাদা হবার অপেক্ষায়,
কিন্তু অপেক্ষা ফুরোবে না, এ রাত তো শেষ হবার নয়।
এ দেশে অনন্ত রাত্রির অভিশাপ জলের শব্দে ঘুমোয়।

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

হারানো বিজ্ঞপ্তি

অপলা বলেছিলো দশ আঙুলে রং মেখে,
এলোচুলে ফিরবো, তোমার সাদাকালো দেশে।
আমার রং গুলো অভিমান করে রইলো সারাদুপুর
রোদেরাও অপেক্ষায়, তার আর ফেরার নাম নেই।

একটা নীল স্বপ্নের ট্রেনে সে ফিরবে বলে,
অন্ধ অজগরের মতো ট্রেনেরা ওকে খুঁজেছে।
প্রতি জানলায় কাতর, অসহায় সব বিজ্ঞপ্তি।
অথচ ফেরার কথাটা বলে ও হারিয়ে গেলো।

সময়কে খুন করে তাই, কাঁটায় ভেজাই রক্তজবা
টিক টিক শব্দের ঘূর্ণিতে, মুহূর্তের সোল্লাস আত্মহত্যা,
শুধু তুমি নেই বলে এ দেশে প্রণয় বে-আইনী আবার।
প্রতিটি কবিতা এখন একান্ত ব্যক্তিগত নিষিদ্ধ ইশতেহার।