শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

সপ্তপদী

এসো, এবার গোল হয়ে বোসো।
মনের দু:খ জ্বালাও ঠোটের ভাজে,
পাত্তরের বুক ঘুরে আসুক সোমরস
ক্ষমাহীন আঘ্রাণের এ মাতাল চাঁদে।

আকাশের অকথ্য কষ্ট মরুক চুপচাপ ডুবে
সাথে নিয়ে সপ্তপদীর পায়ে জমা জন্মান্ধ বেদনা
মনের অন্ধগলির বাঁকে নীল, আজ নির্ভুল জোছনা! 

বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

আত্মসমর্পণ

ভীত হরিণ শাবকের মতো একটা রাস্তা ধরি
পেছনে তাকাই না আর, সামনেও দেখি না
পেছনের পথটুকু মাখা মরা শিউলির গন্ধ
আর সামনে চৈত্রের করাল খাণ্ডবদাহন
তাই হোঁচট খাই আর স্বপ্ন দেখি,
তোমাদের দেখি না।

তোমাদের দেখলে আসলে বড়ো ভয় পাই
কত নিশ্চিন্ত হয়ে  হাটো, হাত-পা নাড়ো।
কি চমৎকার বলে ফেলো, 'ভালোবাসি'!
আর আমি,শব্দটার মানে খুঁজতে পথে নেমে,
 হনহন করে নিজেকেই হারিয়ে ফেলি।

মনের কোমল কোঠরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে
সমস্ত আলোচনা শেষে, সই করি আত্মসমর্পণ।
দু:খের দাগটা মুছে ফেলি,করুণ আঙুলে।

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

সস্তা হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ

কয়েকটা টেবিল ইতস্তত বসে, বিচ্ছিন্ন প্রণয়ীর মতো
হঠাৎ দেখা হবার কুন্ঠা নিয়ে, আপাতত লজ্জিত।
চেয়ারেরা যেন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদলের পুনর্মিলন,
যেখানে পুরোনো ভাগের সিগারেট স্বাদটা আর নেই।

প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের মতো লাল সস্তা বোকা জগটা
অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে, ডাকলেই ফিরবে না আর।
লোহা রং লাগা মলিন গ্লাসগুলো পচে গেছে
ভালোবাসাহীন ঠুনকো সম্পর্ক ছুঁয়েছে ওদের বুক।

সুখ আসলে এক থালা ধোয়া ওঠা গরম ভাত, পাইনি।
ঠাণ্ডা ভাতের জীবনে দু:খের ঝোলটুকু মেখে খেয়ে নেই।
কড়া রোদের মতো ঝালে,পোড়া চোখে জল আসে
আসলে কেউ তো বলার নেই, "আর দুটো ভাত দেই?"

প্যালিওলিথিক স্বপ্ন

 খানিকটা আকাশ অন্ধগলির চোখে চুপ,
গনিকার আদরের মতো পবিত্র এ সকালে।
পীচরাস্তার ছটফটানিতে, ইচ্ছে হয়  
 আবার প্যালিওলিথিক যুগে ফিরে যাই।

এ শহরে অরণ্য নেমে আসুক,  
প্রতি পদক্ষেপে জন্ম নিক, হিংস্র সব শ্বাপদ।
অন্তরে ঘিরে সবুজাভ আধারীর ভয়
আর অনিশ্চিত প্রশ্বাস থাকুক, আমাদের বুকে।

আর একবার ফিরে যাই, আমরা ভয়ের কাছে,
যে ভয় আমাদের আচ্ছাদন, আমাদের আশ্রয়।
মরে যাবার ভয় নেই বলে, বাঁচতে শিখি নি
ছোটার তাড়া না থাকায়, কেবলই ভুল পথ
গোড়ালির নিচে জমে যায় আর থামে।

পরস্ত্রীর গন্ধের মতো আগুন লাগা সন্ধ্যা,
রক্তাভ হয়ে কার্তিকের নীলে গিয়ে মেশে।
রং, আমাদের অবাক না করে আর,
নিয়ন আলো জ্বালিয়ে দু'চোখে
কবোষ্ণ মাংসপিণ্ড মাপতে বসি আবার।  

এ নিষিদ্ধ শহরে কবরের মাছিরা ওড়ে,
লালাভ রক্ত গালে মেখে পরীরা নেমে আসে
কোমল আধারে। আমরা সে পরীর ডানা ছুয়ে
পবিত্র হবার পরেও নষ্ট হতে ভয় পাই।

রাত্রির সাথে প্রণয়কলহ  তুমুল হলে,
আকাশে জাগে কৃষ্ণা অষ্টমীর ভীত চাদ।
আমরা আধো ঘুমে মানুষীর স্বপ্ন দেখি,
কবিতার মত নষ্ট সব স্বপ্ন, গদ্যের অক্ষরে।

স্বপ্ন আমাদের টানে, কাঁটার উজানস্রোতে
করুনায় আদ্র সব গোলকে আমরা ডুবে যাই
আমরা তীব্র হই ভাদ্রের লুব্ধকের মত মেতে।

আমাদের আক্রান্ত শরীরের চক্রান্ত ঘুমুলে,
আমরা স্বপ্ন ভেঙ্গে সভ্য হই, দুপুরে সকালে
ঈশ্বরের পৃথিবীতে ডুবন্ত আলোড়ন তুলে।