সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০১৭

যুদ্ধ

মানুষ আর প্রেম কেও আমার হয় নাই।
আমি ভালোবেসেছিলাম ওদের দুজনকেই
ওরা এভাবে নির্লজ্জ প্রত্যাখান করলো,
আর ছুড়ে ফেলে দিলো আল্পসের করোটিতে

আমি গড়াচ্ছিলাম, নেমে আসছিলাম
মাটির খুব কাছাকাছি সোদা গন্ধে
আমার ঘুম নেমে আসছিলো চোখে
আমি ওদের উপেক্ষা করলাম আরামী বিষাদে।

বরফের কুচিকণারা আমার চোখ ঢেকে দিচ্ছিলো,
অনেক আগের কিসব যুদ্ধে মৃত জমাট সৈনিক
আমাকে বলে দিচ্ছিলো বারবার, কেও বেঁচে নেই।

অথচ একদিন বার্চ আর পাইনের জংগলে ওরাই
আগুন গরম কফির মগ চেপে ধরেছে বুকে
মানুষ যে উষ্ণতা ভুলে গেছে তার সন্তনা পেতে।
এখন মরচের মতো জমে আছে বেয়নেটের ফলায়
তুষারের চাদর গায়ে দিয়ে মাটির গভীর জঠরে।

আমরা ভুলে গেছি অরণ্যের ডাক
ভুলে গেছি পাহাড় আজও গায় আত্মার ভিতরে।
ঝর্ণা অবাক হয়ে জাগে আবছায়ায়, অন্ধকারে।
ভুলে গেছি আমাদের অন্তরে অচীন মানুষ ডাকে।

ফিরে আয়,ফিরে আয়
রক্তের গহীন থেকে ডাকে ভবঘুরে জীবন।
অরণ্য অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নেয়
প্রেমিকেরা সব ধর্ষণ করে ফেলে গেছে তাকে।

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

পুঁথিগন্ধা রোদ

রোরুদ্যমান দুপুরে
এক একটা দিন ঝড়ের অপেক্ষা করি
ধানের পোকারা সোঁদা গন্ধ নিয়ে
চক্রাকারে ঘোরে

কোমল হলুদ ধানের গুচ্ছে
ছেলেবেলার সুর ছড়িয়ে আছে
পুঁথির গানের মতো রক্তে মেশে
ভাতঘুমে আমার চোখ ঝিমিয়ে আসে!

কাঁচা আম কুচি কুচি করে
নুন মরিচের লোনা লাল মিশিয়ে
অনেকটা ভালোবাসা মেখে রেখো
জানলা দিয়ে আসা রোদের মতো
হুট করে আমি ফিরবো একদিন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

কুয়াশার কিশোরী

কুয়াশা নামা পৌষের রাতে আমার কষ্টগুলো,
কি করে যেন, একরাশ ভেজা শিউলি হয়ে ওঠে।
আর একান্ত আধারে, নির্বেদ ঘুমের অনুতাপে,
 ঝরে যায়, আমাদের ভুল ভালোবাসার মতো।

যে কিশোরী তার কোমল তালুতে তুলেছিলো,
সেসব বিচ্ছিন্ন ফুলেল দু:খ, তাকে কেবল মনে পড়ে।
মিহি মেঘের সাদা চাদর গায়ে সে কাঁপছিলো শীতে
পাজরে তার শুভ্র হিম নামছিলো ফেননিভ আদরে।

মায়াবীর সে দেশে ছাই রং ভোরে রাত ঘুম স্বপ্ন হয়।
কিশোরী ফুল কুড়োয়,আকাশ সাদা হবার অপেক্ষায়,
কিন্তু অপেক্ষা ফুরোবে না, এ রাত তো শেষ হবার নয়।
এ দেশে অনন্ত রাত্রির অভিশাপ জলের শব্দে ঘুমোয়।

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

হারানো বিজ্ঞপ্তি

অপলা বলেছিলো দশ আঙুলে রং মেখে,
এলোচুলে ফিরবো, তোমার সাদাকালো দেশে।
আমার রং গুলো অভিমান করে রইলো সারাদুপুর
রোদেরাও অপেক্ষায়, তার আর ফেরার নাম নেই।

একটা নীল স্বপ্নের ট্রেনে সে ফিরবে বলে,
অন্ধ অজগরের মতো ট্রেনেরা ওকে খুঁজেছে।
প্রতি জানলায় কাতর, অসহায় সব বিজ্ঞপ্তি।
অথচ ফেরার কথাটা বলে ও হারিয়ে গেলো।

সময়কে খুন করে তাই, কাঁটায় ভেজাই রক্তজবা
টিক টিক শব্দের ঘূর্ণিতে, মুহূর্তের সোল্লাস আত্মহত্যা,
শুধু তুমি নেই বলে এ দেশে প্রণয় বে-আইনী আবার।
প্রতিটি কবিতা এখন একান্ত ব্যক্তিগত নিষিদ্ধ ইশতেহার।

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

সপ্তপদী

এসো, এবার গোল হয়ে বোসো।
মনের দু:খ জ্বালাও ঠোটের ভাজে,
পাত্তরের বুক ঘুরে আসুক সোমরস
ক্ষমাহীন আঘ্রাণের এ মাতাল চাঁদে।

আকাশের অকথ্য কষ্ট মরুক চুপচাপ ডুবে
সাথে নিয়ে সপ্তপদীর পায়ে জমা জন্মান্ধ বেদনা
মনের অন্ধগলির বাঁকে নীল, আজ নির্ভুল জোছনা! 

বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

আত্মসমর্পণ

ভীত হরিণ শাবকের মতো একটা রাস্তা ধরি
পেছনে তাকাই না আর, সামনেও দেখি না
পেছনের পথটুকু মাখা মরা শিউলির গন্ধ
আর সামনে চৈত্রের করাল খাণ্ডবদাহন
তাই হোঁচট খাই আর স্বপ্ন দেখি,
তোমাদের দেখি না।

তোমাদের দেখলে আসলে বড়ো ভয় পাই
কত নিশ্চিন্ত হয়ে  হাটো, হাত-পা নাড়ো।
কি চমৎকার বলে ফেলো, 'ভালোবাসি'!
আর আমি,শব্দটার মানে খুঁজতে পথে নেমে,
 হনহন করে নিজেকেই হারিয়ে ফেলি।

মনের কোমল কোঠরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে
সমস্ত আলোচনা শেষে, সই করি আত্মসমর্পণ।
দু:খের দাগটা মুছে ফেলি,করুণ আঙুলে।

শনিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৫

সস্তা হোটেলে মধ্যাহ্নভোজ

কয়েকটা টেবিল ইতস্তত বসে, বিচ্ছিন্ন প্রণয়ীর মতো
হঠাৎ দেখা হবার কুন্ঠা নিয়ে, আপাতত লজ্জিত।
চেয়ারেরা যেন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদলের পুনর্মিলন,
যেখানে পুরোনো ভাগের সিগারেট স্বাদটা আর নেই।

প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের মতো লাল সস্তা বোকা জগটা
অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে, ডাকলেই ফিরবে না আর।
লোহা রং লাগা মলিন গ্লাসগুলো পচে গেছে
ভালোবাসাহীন ঠুনকো সম্পর্ক ছুঁয়েছে ওদের বুক।

সুখ আসলে এক থালা ধোয়া ওঠা গরম ভাত, পাইনি।
ঠাণ্ডা ভাতের জীবনে দু:খের ঝোলটুকু মেখে খেয়ে নেই।
কড়া রোদের মতো ঝালে,পোড়া চোখে জল আসে
আসলে কেউ তো বলার নেই, "আর দুটো ভাত দেই?"